নিরাপদ খাদ্য: পাউরুটিতে মেশানো হচ্ছে রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর রাসায়নিক, কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা
বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রুটি, পাউরুটি ও বেকারি খাদ্যে ক্ষতিকর পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডিন ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
সংস্থাটি এ সতর্কতা দিয়ে মঙ্গলবার দৈনিক সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্দেশ দিয়েছে ক্ষতিকর এসব দ্রব্য ব্যবহার বন্ধ করতে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, খাদ্যে এসব বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ, ক্যান্সার, জিনগত রোগ ও মিউটেশন, ডায়রিয়া, বমিভাব ও পেটের পীড়া তৈরি করতে পারে।
এই নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
পাউরুটি ফোলাতে, কৃত্রিম রং ও বিভিন্ন আকৃতি দিতে ট্রান্সফ্যাট ও মিষ্টিজাতীয় রাসায়নিক সোডিয়াম সাইক্রোমেট নামের উপাদান ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে পটাশিয়াম ব্রোমেট ও পটাশিয়াম আয়োডিনও ব্যবহার করা হচ্ছে। বেকারি শিল্পের লোকজনের কাছে এটি ‘ব্রেড এনহ্যান্সার’ নামে পরিচিত।
এগুলো ব্যবহারের বিকল্প থাকলেও তাতে খরচ বেড়ে যায় বলে বেকারিতে অনেকে এই রাসায়নিকটি ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক আবদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ”দেশের সব জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এরপর ব্যবহার বন্ধ না হলে আমরা অভিযান শুরু করবো।”
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষকের উদ্যোগে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, পাউরুটিতে অনুমোদিত মাত্রার অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার করা হচ্ছে।
চারটি জেলা থেকে ২১টি পাউরুটির নমুনা পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) কেজিপ্রতি পাউরুটিতে পাঁচ মিলিগ্রাম মাত্রায় পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহারের অনুমতি দিলেও, ৬৭ শতাংশ পাউরুটির নমুনায় তার চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে।
পাউরুটি ফোলাতে ও নানারকম আকৃতি দিতে এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয়।
২০১৭ সালে ভারতের রুটি, পাউরুটিতে এই ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ার পর এসব রাসায়নিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে ভারতের খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
এতদিন কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি
বাংলাদেশে এতদিন ধরে রুটি ও পাউরুটিতে এসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে পরিচালক আবদুর রহমান বলছেন, ”আমরা পর্যায়ক্রমে সব ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের সংস্থাটিতো নতুন। এক একটি বিষয় ধরা পড়ছে আর আমরা এক এক করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
একজন বেকারি মালিক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, একসময় পাউরুটি ফোলাতে বাংলাদেশ ও ভারতে খাবার সোডা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু নব্বুইয়ের দশক থেকে আটার খামিরকে দীর্ঘ সময় রেখে দেয়ার জন্য পটাশিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার শুরু হয়। এটি দাম কম বলে বেকারি মালিকদের খরচও কম পড়ে।
তিনি দাবি করেন, অনেকদিন ধরেই পাউরুটিতে এটা ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কেউ কেউ জানেন, কেউ জানেন না।
তবে বাংলাদেশের রুটি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”বেকারিতে রুটি, পাউরুটি বানাতে অনেকগুলো উপাদান ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে কোনটা পটাশিয়াম ব্রোমেট, তাই তো আমরা জানি না। যদি এটা ক্ষতিকর হয়, তাহলে আমি কেন ব্যবহার করব? তারা আমাদের বলুক, এই এই জিনিস বাদ দিতে হবে, আমরা সেগুলো বাদ দিয়ে দেবো।”
তবে তিনি স্বীকার করেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘ব্রেড ইমপ্রুভার’, ‘এনজাইম’ নামের কিছু উপাদান গত কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করা হয়।
তিনি জানান, এই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে তারা খুব তাড়াতাড়ি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।